, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ , ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


তামিম ইকবালের অবসর নিয়ে যা বললেন আশরাফুল

  • আপলোড সময় : ০৬-০৭-২০২৩ ০৪:৪২:৩০ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৬-০৭-২০২৩ ০৪:৪২:৩০ অপরাহ্ন
তামিম ইকবালের অবসর নিয়ে যা বললেন আশরাফুল ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন তামিম ইকবাল। আজ বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) চট্টগ্রামের হোটেল টাওয়ার ইনে সংবাদ সম্মেলন ডেকে অবসরের ঘোষণা দেন টাইগার ওয়ানডে এই অধিনায়ক। দুপুর ১ টা ১৫ মিনিটেই নির্ধারিত হোটেলে পৌঁছান তামিম। শুরু থেকেই দেখা যায় তাঁর চোখ ভেজা। মিনিট দশেক পর কথা শুরু করেই তামিম জানান, গতকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচটিই ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার শেষ ম্যাচ। এসময় বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তামিম বলেন, ‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালের ম্যাচটিই আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া নয়। অনেকদিন ধরেই আমি এটা নিয়ে ভাবছি। পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছি এটা নিয়ে।’

এদিকে তার এমন সিদ্ধান্ত একইসঙ্গে হতবাক এবং শকড হয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক আশরাফুল। তিনি বর্তমানে ইংল্যান্ডে অবস্থান করছেন। তামিমের হঠাৎ বিদায়ের পর সেখান থেকেই লাইভে আসেন আশরাফুল। ওয়ানডে অধিনায়কের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘গত এক বছর ধরেই শুনছিলাম, বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জয়ের আশা নিয়ে ভারতে যাচ্ছে- এমন ঘোষণা দেওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। কিন্তু ঘুম থেকে ওঠেই দেখলাম সে অবসর নিয়ে ফেলেছে। যদিও এভাবে হুট করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভ্যাস তার পুরনো। তবুও অবাক হয়েছি, তা সত্ত্বেও বলব সে চমৎকার একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ আর ২-১টা ম্যাচ হারলে তাকে বাজেভাবে অধিনায়কত্ব ছাড়তে হতো। তার সাম্প্রতিক ফর্ম থেকে সাধারণ মানুষ সেই ২০০৭ সালের তামিমকে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটা তো সম্ভব নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি শকড। আর হয়তো ৬-৭টা ম্যাচ পরেই বিশ্বকাপ। তার আগেই এমন সিদ্ধান্ত। জীবনটাই এরকম, তাকেও হঠাৎই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। বাংলাদেশের সব ফরম্যাটে তিনি টপ স্কোরার ছিলেন এবং ২৫টা সেঞ্চুরি অবশ্যই বিরাট অ্যাচিভমেন্ট। আমার মনে হয়না সে ফিরে আসবে, যেহেতু বিশ্বকাপের আগেও আর তেমন সময় নেই।’

এর আগে অনেকটা শোকার্ত মুখেই লাইভে আসেন আশরাফুল। শুরুতে তামিমের ছোটবেলার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা তেকে আমি তামিমকে চিনি। সে সময় তার ভাই নাফিস ইকবালের সঙ্গে খেলছিলাম, যখন সে হাফপ্যান্ট পরে আসতো। পরে ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সে জাতীয় দলে আসে। এর আগে ডিওএইচএসের হয়ে এক ম্যাচে ১৮৮ রান করেছিল, আমার মনে আছে। তখন থেকেই আমরা জানতাম একজন ড্যাশিং ওপেনার আসছে বাংলাদেশে। প্রথমে অফসাইডে খেলত বেশি, পরবর্তীতে জেমি সিডন্স এবং সালাউদ্দিনের মাধ্যমে সে লেগসাইডে খেলতেও অভ্যস্ত হয়।’

এছাড়া তামিমের বিদায়ে বাংলাদেশের সামনের পথটা কঠিন হয়ে গেছে বলে মনে করেন আশরাফুল। তবে তার ফিরে আসার স্বপ্নও দেখছেন তিনি, ‘এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য পথটা কঠিন হয়ে গেল। যখন আমরা তৃতীয় ওপেনার খুঁজছিলাম, তার ভেতরই অভিজ্ঞ একজনকে হারালাম। তবে আমি আশা করব তামিম ইজিলি আরও ৩-৪ বছর ঘরোয়া লিগে খেলবে এবং আন্তর্জাতিকেও ফিরতে পারেন। তার বয়স তো এত বেশি হয়নি আসলে, অন্তত অবসর নেওয়ার মতো নয়। কিছুদিন রেস্ট নিয়ে তিনি ফিরতেও পারেন। যাইহোক, অল দ্য বেস্ট তামিম।’

বাংলাদেশের ক্রিকেটে এই ড্যাশিং ওপেনারের অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন আশরাফুল, ‘তামিম তোমাকে ধন্যবাদ, গত ১৯টা বছর তুমি আমাদেরকে অনেক ইন্টারটেইন করেছ। ২০০৭ বিশ্বকাপে প্রথমে ভারতের দেওয়া ১৯১ রানের জবাবে ডমিন্যান্ট করার মানসিকতা দেখিয়েছ। এরপর বাংলাদেশের হয়ে অনেক অর্জন তোমার, আমার জুনিয়র হলেও তুমি আমার আগেই অবসরের ঘোষণা দিয়েছ। যেটা সিনিয়র হয়েও আমি এবং মাশরাফি এখনও পারিনি। তামিমের বিগ হার্ট, ওর মতো বিগহার্ট মানসিকতা কারও নেই। তার এমন দৃঢ় মনোবল এবং ব্যক্তিত্ব আসলেই অসাধারণ।’

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার বিচরণ শুরু সেই ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে। স্রেফ চার ওয়ানডের অভিজ্ঞতায় খেলতে যান বিশ্বকাপে। খেলতে নেমে প্রথম ম্যাচেই ভারতের বিপক্ষে স্মরণীয় এক জয়ে দাপুটে ফিফটি করে নজর কাড়েন ক্রিকেটবিশ্বের।  এর পর নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ক্রমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান হিসেবে। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বাংলাদেশের ব্যাটিং রেকর্ডের অনেক কিছুই নিজের করে নেন তামিম। বাংলাদেশের ক্রিকেটে অনেক ‘প্রথম’ কিছুর জন্ম হয় তার হাত ধরে। 

বিদায়বেলায় তার নামের পাশে ৭০ টেস্টে ৩৮.৮৯ গড়ে রান ৫ হাজার ১৩৪। সেঞ্চুরি ১০টি, ফিফটি ৩১টি। টেস্টে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ও সেঞ্চুরি তার।  ওয়ানডে ২৪১টি খেলে ৩৬.৬২ গড়ে রান করেছেন ৮ হাজার ৩১৩। ১৪ সেঞ্চুরির পাশে এখানে ফিফটি ৫৬টি। এই সংস্করণে দেশের হয়ে রান, সেঞ্চুরি, ফিফটি— সবকিছুতেই তিনি সবার ওপরে।  ৭৪ ম্যাচে ১ হাজার ৭০১ রান নিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিকে বিদায় বলেছেন গত জুলাইয়েই। এ সংস্করণে দেশের হয়ে একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান তিনি। 

তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৫ হাজার রান করা দেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার সেঞ্চুরি ২৫টি। বাংলাদেশের হয়ে ২০ সেঞ্চুরিও নেই আর কারও।  ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে নিয়মিত অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের চোটের কারণে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে দেশের হয়ে প্রথম অধিনায়কত্বের স্বাদ পান তামিম। ২০১৯ বিশ্বকাপের পর পর শ্রীলংকা সফরে তিন ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেন তিনি মাশরাফি বিন মুর্তজার চোটে পড়ায়। ২০২০ সালে মাশরাফি নেতৃত্ব ছাড়ার পর ওয়ানডে দলের নিয়মিত অধিনায়কের দায়িত্বও পান তামিম। 

সব মিলিয়ে ৩৭ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি, জয়ের দেখা পেয়েছেন ২১টিতে। অন্তত ৫টি ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে সাফল্যের শতকরা হারে বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক তিনিই।  বর্ণাঢ্য এই ক্যারিয়ারে নিশ্চিতভাবেই একটি বড় আক্ষেপ হয়ে থাকবে বিশ্বকাপ। চারটি ওয়ানডে বিশ্বকাপে ২৯ ম্যাচ খেলে তার সেঞ্চুরি নেই। চারটি ফিফটিতে ৭১৮ রান করেছেন কেবল ২৪.৭৫ গড়ে। ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৩১৯ রান তাড়ায় ৯৫ রানের ইনিংসটিই বিশ্বকাপে তার ক্যারিয়ার। 
সর্বশেষ সংবাদ